সাদা ঘোড়ার পিঠে কালো জোব্বা পড়ে দাঁড়ালেন হোসে মার্তি। কিউবা এমন এক দেশ যেখানে কবিদের তরবারি নিয়ে যুদ্ধে যেতে হয়েছে বারবার।
উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার ঠিক মাঝামাঝি, ক্যারাবিয়ান সাগরে কিউবার অবস্থান। ছোট্ট দেশ। অথচ কি বিচিত্র তার ইতিহাস। কিউবার মাপের অন্য কোনো দেশ হয়ত পৃথিবীর ইতিহাসে এত খানি জায়গা করে নিতে পারেনি।
কার্বন ডেটিংএর মাধ্যমে জানা যায় যে কিউবার প্রথম মানুষ, গুয়ানাহাতাবে-রা, এসেছিল ৪০০০ বছর আগে। এরা প্রস্তর যুগের মানুষ। গুয়ানাহাতাবে-রা গুহায় থাকত। শিকার করাই এদের প্রধান পেশা ছিল। ২০০০ বছর পর এদের জায়গা দখল করল সিবোনে-রা। এরাও প্রাকসেরামিক যুগের মানুষ। সিবোনে-রা মাছ ধরতে আর চাষবাস করতে জানত।
প্রায় ১১০০ খ্রিষ্ঠাব্দ নাগাদ, দক্ষিণ আমেরিকার ওরিনোকো নদীর ব-দ্বীপ থেকে কিউবায় পৌঁছয় তাইনো মানব গোষ্ঠী।
তাইনোরা সিবোনে বা গুয়ানাহাতাবে-দের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ছিল। তারা উন্নত মানের কৃষিকাজ জানত। কাপড় বুনতে এবং নৌকা বানাতে পারত। তাইনো-রা চ্যাপ্টা কপাল-কে সৌন্দর্য্যের প্রতিক হিসেবে মনে করত। শৈশবেই তারা মাথার খুলিকে এক বিশেষ প্রক্রিয়াতে চ্যাপ্টা করার চেষ্টা করত। তাদের সমাজব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত ভাবে জটিল ছিল। প্রশাসনে গোষ্ঠীর সকলে যোগ দিতেন। অনেকটা পঞ্চায়েতের মত ব্যাবস্থা ছিল। মোড়লরা (caciques) বাকি সকলের মতামত নিয়ে কাজ চালাতেন।
কিউবায় প্রচলিত কৃষিপণ্যের ৬০ ভাগই তাইনোদের হাত ধরে শুরু হয়েছে। তামাক-কে মানুষের উপভোগ্য করে তুলেছিল এই তাইনোরাই। এখনো কিছু তাইনো শব্দ কিউবায় মুখে মুখে ফেরে। যেমন ‘গুয়াজিরো’ (আমাদের লোক)।
তাইনো গোষ্ঠী প্রায় ৪০০ বছর ধরে কিউবাতে সুখে শান্তিতে ছিল। সবই ভালো চলছিল। ১৪৯২ সালের সাতাশে অক্টোবর সকালে কিছু তাইনো যুবক যুবতী সবিস্ময়ে দেখলে যে দিকচক্রবালে এক নতুন ধরণের নৌকা ভেসে উঠেছে। সেই মস্ত জাহাজে জনৈক এস্পানিওল অভিযাত্রি দেখলেন ‘মানুষের চোখে দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ!’ হ্যাঁ, কিউবার প্রথম দর্শনে এমনটাই বলে উঠেছিলেন কলম্বাস। সাধ করে দ্বীপের নাম রেখেছিলেন ‘জুয়ানা’। এক এস্পানিওল রানির নামে নামকরণ।
কিছুদিনের মধ্যেই কলম্বাসের মোহভঙ্গ হয়। ‘দ্য গ্রেট খান’-এর সোনার দেশ (ভারতবর্ষ?) এ নয়। নিবিড় অরণ্যে ঘেরা কিউবাকে ত্যাগ করে কলম্বাস জাহাজ ভাসালেন হিসপানিওলার (হাইতি, ডমিকিকান রিপাবলিক) দিকে। আদিবাসী তাইনোদের থেকে কিউবা ছিনিয়ে নিতে কোনকিস্তাদর এস্পানিওলরা এসেছিল আরো বিশ বছর পরে।
(কিউবার ইতিহাস ১)