সুরভিত কোন জন? অস্থিরই সত্য। ওই যে ঝাঁকড়া চুলো মেয়ে, সেই যে নীরব পুরুষ, সেই যে নারী-পুরুষের গণ্ডি ভাঙতে চাওয়া মানুষ। সবার মধ্যে অস্থিরতার নদী তির তির করে বইছে। আমার মধ্যেও।
আমাদের সকলের গান ভাঁজা দরকার। নিজস্ব সুর গুন গুন করা দরকার। একদম ভেতরে, গুহার অভ্যন্তরে, কিছু সুরের দমক তো আছেই। যেমন না বলা কথা আছে। চিরবিরানি আছে।
বড় বড় মানুষেরা কত সুন্দর গান লেখেন, সুর করেন। আমরা ভয় পাই। এমন তো আমরা পারব না। আরো বড় ভয় কিন্তু আছে। বুকের ভেতরে যে সুর ধিকিধিকি জ্বলছে, টলমল করছে, তাকে স্পর্শ করতে না পারাও ভয়ের। নিজের কাছে নিজের প্রকাশিত না হওয়াও ভয়ের। এ জন্ম কালে না দেখাও ক্ষতির।
আমাদের পাড়ায় ছট পুজো হচ্ছে। আকাশে যে চাকতির মত সূর্য, তারই বউ নাকি ঊষা। ছটপুজো ঊষার আরাধনা। জোড়াসাঁকোর এপারে, কত দেহাতি লোক থাকে। বস্তি উপছে পড়ে। তাকের মত বাসা করে থাকে, চৌকির ওপর বাসা করে থাকে, ফুটপাতে গুটিসুঁটি মেরে থাকে। এরা কেউ রবি ঠাকুরের গান গুন গুন করেনি। ওফ! জোড়াসাঁকোয় কত মানুষের মেলা। তারা কেউ রবি ঠাকুরকে জানেনি। বুকটা টিপটিপ করতে থাকে। এতটা কাছে এসেও না আসার দুঃখ চিক চিক করতে থাকে। তারপর অবশ্য অন্য কথা ভাবি।
হয়ত ছট পুজোর পর শীত জাঁকিয়ে পড়বে। দেহাতি মানুষগুলো কাঠকুটো জুটিয়ে আগুন জ্বালবে। তুলসিদাসের গানে ম’ ম’ করবে ভানুসিংহের উঠান। তারা যতটা তদগত হতে পারবে, যত নিমজ্জিত হতে পারবে সেই একটানা সুরে, সেই পদাবলীর চরণে, আমরা পারব না। আগুনের শাখা বুক চিরে নিয়ে আসবে গুন গুনে গান। যে সব গান গাইতে আমরা ভয় পেয়েছিলাম। আমার দেশ ভয় পায়নি।