উমর খালিদ

তুমি হতে পারো ধরমেতে খুব ধীর,

উমর খালিদ সন্ত্রাসবাদে স্থির!

তুমি হতে পারো ফুরফুরে কোনো গান,

উমর চাইছে গণ অভ্যুত্থান।

একজন আনন্দময় মানুষের খোঁজে

একজন আনন্দময় মানুষের খোঁজে সারা দিন কেটে গেল,

দু লহমা বসিনি।

পাশের বাড়ি থেকে কেউ ডাকছিলো। শুনিনি।

কপালে ঘাম জমছিলো। মুছে নিলাম।

চেয়ারে বসেছিলো জমকালো কত জন,

একজন আনন্দময় মানুষের খোঁজে তারাও যাবে।

ঝড়মহল

ঝড়মহলে ছিলাম তাই মহলা দিই নি,

মেঘের খবর আমার সেই বুকপকেটে রাখা,

কবিতা নিয়ে কখনো কোনো কষ্ট পাইনি,

এটুকু আর হত্যে দিয়ে জেতার মত নয়।

হিন্দু স্কুলের দেয়ালে ওই মেঘ ঘনিয়ে এলো,

কালো কফির ফোঁটায় ফোঁটায় তুমুল শরৎকাল,

আমার কিছু অন্তমিল কুলুঙ্গিতে ছিলো,

আর কিছুটা ছড়া কাটার শব্দ যন্ত্রণার।

মেঘের মত আমিও তাই ছিন্ন। ঘনায়মান।

রাখি না কোনো হিসাব কিতাব দীন কল্পনার,

শহরতলে পর্ণদলে লাল কেশরের ছাপ,

বাকিটা শুধু অসহ্য সেই স্থির স্তব্ধতার।

ঠিক মত আকাশ থাকলে

ঠিক মত আকাশ থাকলে

তুমি থেকে যেতে,

নদীর মত থই থাকলেও,

হয়ত দাঁড়াতে,

তারপর অরণ্যের মত গহন হয়ে কাছে বসতাম,

তুমি বনান্তের মত কঠোর হতে,

ভালোবাসতে।

একজন বুড়ো মানুষ

একজন বুড়ো মানুষ বসে আছেন। রোজই থাকেন। বই নেই, মোবাইল নেই। এদিক ওদিক তাকান। ওয়েটার দের হাতছানি দিয়ে ডাকেন। একটা দুটো কালো কফি নেন।

সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট। পালিশ করা পাম্প শু। খয়েড়ি রঙের মোজা, এইচএমটির সাদা ঘড়ি। আচ্ছা ভদ্রলোক কি উকিল? একটা কালো জিন্সের কাঁধ-ব্যাগ নিয়ে আসেন। উকিলের ব্যাগ।

কারো সাথে কথা বলেন না। কেউ ওনার সাথে কথা বলে না। পায়ের ওপর পা তুলে আয়েস করে বসেন। আমি রোজ ওনাকে লক্ষ করি। মনে হয় এ ওনার অনেক দিনের অভ্যাস। হয়ত এক সময় টেবিল এমন ফাঁকা থাকত না। কাজ সেরে হয়ত বিকেলে আসতেন।

এখন কাজ নেই। তাই সকালেও আসা যায়।

মহাকালের পদক্ষেপ দ্রিমি দ্রিমি শুনতে পাই। কাঁধ সোজা করা মানুষটার বয়েসের ভার টের পাই। এই টের পাওয়া টুকু কম উত্তেজক নয়। এর মধ্যে থেকে আমি বিগত সহস্রাব্দকে কল্পনা করতে পারি। শিপ্রা নদীর তীরে, কোনো অলস অপরাহ্ণে বসে থাকা কিশোরের মুখ ভাবতে পারি।

এমনি একজন মানুষকে মিলওয়াকির কাফেতেও দেখেছিলাম। নিয়ম করে তিনি আসতেন। রোশ্যাম্বো কাফের একতলায় বসতেন। একটা কালো কফি নিয়ে। কেউ তার সাথে কথা বলত না। তিনিও কারোর সাথে কথা বলতেন না। মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে হাত ঘসতেন। হয়ত উচ্চারণের অপেক্ষায়।

একজন বুড়ো মানুষ চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন। অনতিকাল পর আমি সেখানে বসব।

ঘর বাড়ি

কতবার ‘আমি’ বললে আজ?
উঠোনে তবু জুঁইএর গন্ধ আছে,
উবু হয়ে শুধু বেছে নাও ঘর বাড়ি,
এখনও তুমি সজল যে হয় তারই!
আকাশে হয়ত গোধূলির আনাগোনা।

কনকচাঁপার নাম শুনেছিলে তুমি,
পুড়ে খাক হোক সমস্ত বনভূমি,
তবু তো তুমি নদীর প্রান্তে গেলে,
মুহুর্তে তুমি এমন স্বচ্ছ হলে,
জ্যোৎস্নার মত শিহরিত মেঘমাঠ!

এই যে হিয়া থরোথরো

চারজন বন্ধু পেলাম হোস্টেলে। ওড়িশার অমিত, দূর্গাপুরের চন্দন, করাচীর আয়েষা আর পুণার সুমিত্রা। কি করে হলো জানিনা। আমরা পাঁচজন বন্ধু হয়ে গেলাম। বিপদে আপদে আনন্দে দুঃখে পাঁচজনে মিশে মিশে রইলাম সেই ২০১৫ থেকে।

Continue reading “এই যে হিয়া থরোথরো”

অদ্বৈত

অন্তরে কি দুজনে সমান? দেখতেই যা আলাদা? জীবনে, গণিতে, সাহিত্যে, এই প্রশ্নটা আমাদের প্রায়ই খোঁচা দিয়ে যায়। ১৮০০ সালের জ্যাকোবাইট, ১৯০০ সালের নারোদনিক আর ২০০০ সালের মাওবাদী কি একই মানুষ। শুধু আকারে ভিন্ন? ফাউস্ট আর গোরা কি
একই উপন্যাস? ‘একই’ কথাটার অর্থই বা কি? কতটা নির্দিষ্ট করে দুটো পৃথক বস্তুকে ‘এক’ বলা যায়? ‘পৃথক’ কথাটার অর্থই বা কি?

গণিতে পঁনকেয়ার সায়েব এই প্রশ্নটা নিয়ে ভেবেছিলেন। একটা (ফাঁপা) গোলক আর একটা (ফাঁপা) টোরাস কি একই বস্তু? একটা কি বাঁকিয়ে চুরিয়ে, টেনে, চেপ্টে দিয়ে, আরেকটায় পালটে ফেলা যায়?

Continue reading “অদ্বৈত”

স্নেহলতা

এই যে আঙুলের আগায়,
তিরতির করে কাঁপছে সময়।
নৌকায় বসে আছো তুমি।
তোমার রোগ।
আর অজস্র সুসময়।
তারপরই লণ্ডভণ্ড দেহ,
পারিজাতের মত সুপ্রতিম।
তীরের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা স্নেহ,
হিজল নদীর মতই আরক্তিম।