শব্দ হচ্ছে

ভুলে যাওয়া গানের মত শব্দ হচ্ছে,
আমার বুকের খুব ভেতরে নদীর ধরণ,
তির তির তির বইছে নদী স্বজনহারা,
শব্দ হচ্ছে, শব্দ হচ্ছে, সারাটাক্ষণ।

তেমন

যদি সব ভুল হয়ে যায়,

কষ্টে থাকি,

যদি না হতে পারি,

যেমনটা চাও।

ব্যালকনিতে যখন নামে

হু হু বাতাস,

জানি না ঠিক..

হচ্ছিনা আর কোথাও উধাও।

আমি ঠিক তেমনি থাকি,

যেমন থাকা,

কার্নিশে জলের ফোঁটা,

দেখার মত,

শুধু মুধু কষ্টে থাকি এখন তখন,

যদি সব ভুল হয়ে যায়,

সময় যত।

জাদুকর আছে জানি

একটা অপার্থিব মুহুর্তের জন্য,
ঘুম থেকে উঠে পড়ি।
যা হয়নি,
যা হতে পারে,
যা কখনো হবে না বলে শিউরে উঠি,
এই অতলান্ত জীবনে যা কোনো দিন ঘটবে বলে নীরবতা আসে,
তার জন্য,
সেই তার জন্য,
থেমে যাই।

আমাদের অভ্যাস হয়ে যায়,
আমাদের বয়েস হয়ে যায়,
যা যা খুঁত ছিল,
এবরো খেবরো পথ ছিল,
সবই সুমসৃণ দেখায়।

যদিও জাদুকর আছে বলে জানি,
এই যে অতল অরণ্যানি,
তার গহনে জাদুকর অপার্থিব জানি
তবু ঘুম ভেঙে যায়,
টিপটিপিয়ে উঠে পড়ি,
যদি কখনো না হয়…
যদি জীবনের কোনো বিন্দুতে ঝাপসা না হতে পারি…

প্রস্থান

যে কোনো সময় তুমি চলে যেতে পারো,
কিন্তু,
যে কোনো সময় তুমি চলে যেতে চাইতে পারো না।

সেসব কথা লিখিনা কারণ গায়ক মৃত্যু চেয়েছে,
সেসব আগাছাজীবন লেখা যায় না আমৃত্যু,
তবু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলছি,
যে কোনো সময় তুমি গটগট করে বেড়িয়ে যাও,
‘দুরছাই’ বলে বেড়িয়ে যাও,
ধ্বংস গেয়ে উঠে চলে যাও মহাপ্রস্থান।

কিন্তু ওই,
বেড়িয়ে যেতে চাইতে পারবে না।

আর উপায় নেই

যা স্পষ্ট করে বলা যায় না,

শুধু সেটুকুর জন্য,

আমরা নিথর হয়ে শুয়ে থাকতে পারি হাজার বছর।

যা সুবিন্যস্ত নয়,

তুখোর বা বোধবদ্ধ নয়,

যা শব্দ করে না, শব্দে বাঁচে না

তার জন্য আমরা তীব্র হয়ে থাকতে পারি হাজার মুহুর্ত।

সেই গুহার বাইরে আমি যাব,

সেই তপোবন পেরিয়ে, স্কুল বাজার উজিয়ে,

সমুদ্র ভেদ করে,

মনের দীর্ণ শালপাতা ছিন্ন করে,

আমি যাব।

আমি দেখব। আমি শুনব। আমি রোমাঞ্চিত হব।

আর তো উপায় দেখিনা।

ভেতরের ঘরে

ভেতরে দেখিনি বলে পাপ হয়েছে,

তাই ভোরবেলা উঠব ভেবেছি আজ রাতে,

শুকতারার মত যদি কেউ জ্বলে থাকে,

তাকে নেব আঁকড়ে আমি সব উজাড় করে,

এই দীর্ণ, অবচ্ছিন্ন ভেতরের ঘরে,

হঠাৎ যেন জ্যোৎস্না এসে পরে।

বন্ধক

এমন ভাবে চলে যাচ্ছে দিন,
ছুঁতে গেলে ছ্যাঁকা লেগে যায়
অর্জুনের শরসন্ধানে,
একাগ্র তার অহং তপোময়।


ফিরে দেখছি মুহুর্তের মত,
কি যেন সব লেগে থাকছে পথে,
অবিরত ধুলার মত তার,
মৃত্যু হয়। হয়েও হয় না।

এক মুঠো জুঁই ফুলের কাছে,
আমার সব জাহাজ বাঁধা আছে,
সমস্ত দিনই সফল হয়,
শুধু তার গন্ধ মেটে না।

একজন আনন্দময় মানুষের খোঁজে

একজন আনন্দময় মানুষের খোঁজে সারা দিন কেটে গেল,

দু লহমা বসিনি।

পাশের বাড়ি থেকে কেউ ডাকছিলো। শুনিনি।

কপালে ঘাম জমছিলো। মুছে নিলাম।

চেয়ারে বসেছিলো জমকালো কত জন,

একজন আনন্দময় মানুষের খোঁজে তারাও যাবে।

ঝড়মহল

ঝড়মহলে ছিলাম তাই মহলা দিই নি,

মেঘের খবর আমার সেই বুকপকেটে রাখা,

কবিতা নিয়ে কখনো কোনো কষ্ট পাইনি,

এটুকু আর হত্যে দিয়ে জেতার মত নয়।

হিন্দু স্কুলের দেয়ালে ওই মেঘ ঘনিয়ে এলো,

কালো কফির ফোঁটায় ফোঁটায় তুমুল শরৎকাল,

আমার কিছু অন্তমিল কুলুঙ্গিতে ছিলো,

আর কিছুটা ছড়া কাটার শব্দ যন্ত্রণার।

মেঘের মত আমিও তাই ছিন্ন। ঘনায়মান।

রাখি না কোনো হিসাব কিতাব দীন কল্পনার,

শহরতলে পর্ণদলে লাল কেশরের ছাপ,

বাকিটা শুধু অসহ্য সেই স্থির স্তব্ধতার।