বহুকাল অরণ্যে থাকি //
তবু অরণ্যের অভ্যাস হলো না।//
কলেজ স্ট্রিট ফাঁকা। আজ রোববার। মরীয়া হয়ে ভাবলাম আজ একটা বই কিনব। মন পরিষ্কার রাখব। ক্রুর হয়ে বিচার করব না ভালো মন্দ। সংস্কার মুক্ত হয়ে খুঁজব একটা ভালো বই। তারপর পাতা উলটে উলটে পড়ব। কফি হাউসে বসে।
নতুন বই-এর দোকান বন্ধ। তাই পুরোনোদের দিকেই গেলাম। প্রেসিডেন্সির ফুটপাতে কিছু শাটার খোলা। কিছুটা ফুটপাত দখলে। আকাশের রং ছাই ছাই। প্রান্ত বসন্তের গন্ধ পাচ্ছি আর হাঁটছি।
পুরোনো বই-এর দোকানে জটিল সব তত্ত্বকথার বই। অনেক কিছু শিখিয়ে দেওয়ার গ্রম্থমালা। আমি কিছু শিখতে চাইনা। মগজের বোঝা বাড়াতে চাই না। তাই সেসব বই এড়িয়ে গেলাম।
তাদের আসে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু ইংরেজি নভেল। আগাথা ক্রিস্টি। সমারসেট মম। ডিকেন্স। আমি কি কঠিন কিছু পড়তে চাই? জটিল গ্রন্থি বেয়ে এগোতে চাই কোনো অপরিচিত মানুষের মানসপথে? মোটেই না। কক্ষনো না। আজ তো নয়ই। যারা বেশ্যালয়ের হাতছানি এড়াতে বই-এর দোকানে এসেছে, আমি তাদের দলে।
ইংরেজি বই -এর ভীড় এড়িয়ে কিছু বাংলা বই উঁকি দিলো। অমরেন্দ্র চক্রবর্তীর ‘আমাজনের জঙ্গলে’ দেখছি। খানিকটা দূরে ‘টমকাকার কুটির’। এসব জন্মান্তরের বই। কতকাল আগে তাদের থেকে চুঁইয়ে পড়ত হৃদি। এক পশলা দু পশলা ভিজতাম। তাথৈ তাথৈ। এখন হৃদয় কঠিন হয়ে এসেছে। এসব বই আর আমার জন্য নয়।
ফুটপাতের পর ফুটপাত বদলে খালি হাতে ফিরে এসেছি। খোলা মনে বই ঢুঁড়ব ভেবেছিলাম। কত যুগের সংস্কারে বদ্ধ মন। আর্ত মন। সে আর খোলা মনে হাঁটতে পারেনি। খানিকটা ছটফটিয়েছে। তারপর ভনিতার প্রতি বিরক্ত হয়েছে।
খালি হাতেই কফি হাউসে বসলাম। দিন কেটে যায়।