নয়নসুখ কিসে হয়? ধৌলাধার পর্বতমালা। আঠারো শতকের চিত্রকর। অমিত দত্তর ছায়াছবি।
ধর্মশালার থেকে পনেরো কিলোমিটার দূরে ম্যাকলাওয়েডগঞ্জে আছি। শুনেছি দলাই লামা এখানে কোথাও থাকেন। বুদ্ধ নিয়ে আগ্রহ আছে। দলাই লামাকে নিয়ে ততটা নেই।
আঠারো শতকে জস্রোতা রাজ্যে ছবি আঁকতেন চিত্রকর নৈনসুখ। জস্রোতা এই ম্যাকলাওয়েডগঞ্জ থেকে শ’দুই কিলোমিটার হবে। জম্মুর নীচের দিকে। নৈনসুখের ছবি দেখলে সাধ হয় minimal শব্দটা উচ্চারণ করি। রাজদরবারে রাজা ঘোড়া দেখছেন। পেছনে সাদা পর্দা ফেলা। ঘোড়ার গড়ন তাতে প্রকাশিত। সিংহাসনের পাশেই কুন্ডলী পাকিয়ে উঠেছে হুঁকোর নল। বাকি সমস্তটা ফ্যাকাশে, নিরলস, নিস্তরঙ্গ।

আমাদের হোম স্টের ঠিক পেছনে এক নিস্তরঙ্গ গৃহস্থালি দেখেছি। উঠানে একটা গাছ আকাশ ফুঁড়ে উঠেছে। এক বয়স্কা মহিলা গাছে জল দিচ্ছেন। পাহাড়ি কুকুর রোদ পোয়াচ্ছে। ধাপে ধাপে কিসব চাষ করেছেন কৃষক। সেও এক নয়নসুখ। ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। ততটা মিনিমাল, ততটা ফ্যাকাশে উজ্জ্বল, ততটা নিরলস হলো না। সেই নিস্তরঙ্গতার জন্য অনেকখানি অভ্যাস প্রয়োজন।

তেমন অভ্যাস করেছেন অমিত দত্ত মশাই। নৈনসুখের ছবি গুলি ছায়াছবির ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন কি অপরিসীম যত্নে। ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তার ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। ২০১০ সালে নির্মিত এই ছায়াছবির ম্যাজিক আমার নয়ন অবধি পৌঁছাতে বারো বছর সময় নিয়েছে। ইরান দেশের সেই সব জাদুকর ডিরেক্টরদের ছোঁওয়া অমিতবাবু ছবিতে। উৎপলেন্দুর হৃদয় তার ক্যানভাসে। এও এক অন্য নয়নসুখ।

এই যে সামনে ধৌলাধার পর্বতমালা। মেঘনাদ তার দেহ। বরফে রোদে মাঝে মাঝেই ঝিকিয়ে উঠছে। ভাবছি এত শব্দ কেন। এত তাড়া কেন। এত মিথ্যা কেন। ওই পাহাড়ের মত নিরলস, নিস্তরঙ্গ, মিনিমাল হতে কত জন্ম লাগতে পারে? কত জন্ম গেলে তবে আয়ত্ত হবে নয়নসুখ।
