বুদ্ধদেব বসু ‘উত্তর তিরিশ’ লিখেছেন। আমি তেমন কিছু লিখতে পারিনি। ৩৪ বছর বয়েস হয়ে গেছে। কিছু একটা লেখা উচিৎ ছিলো। এই সেদিন শিয়ালদা থেকে লক্ষিকান্তপুর লোকাল ধরে ঢাকুরিয়া যেতাম। ভোর ভোর টিউশনি। ছাত্রী সিক্স না সেভেনে পড়ত। ঘুম চোখে কাকভোরে দরজা খুলে দিতো। তারপর সারাদিন কিই বা করতাম। অঙ্কই বোধহয়। নয়ত হাবিজাবি পত্র পত্রিকা পড়তাম। ফেভারিট কেবিনে। সল্টলেক, ফুলবাগান, গড়িয়া টিউশনি করে বেড়াতাম। এই সেদিন।
এখন উত্তর তিরিশ। দিন পালটে গেছে। জীবনে শৌখিন কিছু সুখের জিম্মাদারি নিয়েছিলাম। কি কি সব হবে, বা হওয়া উচিৎ বলে ধরে নিয়েছিলাম। কেন ভেবেছিলাম কে জানে। হয়ত কৈশোরে বেশি উপন্যাস পাঠ হয়েছিল। লিখন কে সত্য বলে ভেবেছিলাম। এখন দেখছি নিজের জীবনে যতটা রোমাঞ্চ, গল্প উপন্যাসে তত নেই। এখন দেখছি নিজের জীবনে যতটা সাদাকালো, গল্প উপন্যাসে ততটা সাহস করে না। একেবারে তিন সত্যি।
সাধ ছিলো দেশ দেখব। এদিক সেদিক, এ দেশ সে দেশ। তারপর দেখি দেশ দেখে ততটা সুখ নেই, যতটা বিদ্যাসাগরমশাই বলেছিলেন। বরং সুমনই সত্য। সব এক একই। সম্প্রতি ফরাসি থেকে ইংরেজীতে একটি গণিত পুস্তকের পাঠান্তর করা হলো। কলকাতা, মেদিনীপুর, দুর্গাপুর, দিল্লীর সব ছেলেমেয়েদের নিয়ে একটা গবেষণা-আড্ডা জুটিয়েছি। সে সব ছানাপোনারাই করল। আমি ঝুঁকে বসে এডিট করলাম। সীমিত ফরাসি আর সীমিত গণিত পেটে। অতএব কার্য সমাধা করতে বিস্তর সময় লেগেছে। করার পর দেখি সব এক একই। সে তুমি যতই করো পিএইচডি কিংবা তা ধিন ধিনা। কোথায় কোন প্রাচীন ক্ষয় জমে যায় কেউ জানে না।
‘উত্তর তিরিশ’ আমাদের লেখা খুব দরকার। বিপ্লব হয়ে উঠল না। বড়জোর হয়েছে তৃণমূল সরকার। সেও আবার বই ঝাড়ছে, পড়ুয়া থেকে শিক্ষককে ঘুষ দিতে শেখাচ্ছে। সেই নিয়ে আমাদের কিছু লেখা দরকার। বুদ্ধদেব বসু হলে হয়তো লিখতেন। আমাদেরও লেখা উচিৎ। তারচে দেখছি সেই মাঝ বয়েসি মানুষকে। তার মুখে একটা কৈশোরের হাসি। সে হাসি এখনো ফুরায়নি। দেখছি দিগন্ত বিস্তৃত যুদ্ধহীন প্রান্তরকে। যেখানে আশার ফসল এখনো বুড়ায়নি। এই উত্তর তিরিশে, এই সব দেখছি।