গাড়ি আর চড়ব না। কম চড়ব। অবশ্য আজ গরম কম। তাই এসব ভাবছি। গিরীশ পার্ক মোড়ের কাছে শশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘কত করে?’ প্রথমে উত্তর না দিয়ে ছুলতে শুরু করে দিলে। আবার শুধালাম, ‘কত করে দাদা শশা?’
আট টাকা।
জাতে উঠে গেছি বোধহয়। অল্প ভুঁড়ি হয়েছে। মুখে চোখে রুক্ষতা এসেছে। চোখে একটু বক্রতা এসেছে। শৈশব কোথায় হেজে বুজে গেছে। নইলে তো দশটাকাই বলত। বলত বোধহয়।
‘আমড়া কত?’ শশার পাশেই সে টুসটুস করছিলো। এবারে দর পেলাম ১০টাকা। লোকটার মুখে কিছুটা খুশি ভেসে উঠল। বললে, ‘এক সাথে মেখে দিই? খুব ভালো হয়।’
মেট্রো দুই মিনিটে। পুরোনো একটা কার্ড পেলাম মানি ব্যাগে। চলবে কি? মনে কিছুটা সময় বাঁচানোর মরীয়া আশঙ্কা ঝিকিয়ে উঠল। যতটা চাঞ্চল্য এই লেখায় চাপার চেষ্টা করছি, তারই কিছুটা চলকে উঠল। এর পর কি হবে?
কার্ডটা চলেছে। লটারি পেলে বোধহয় এরকম লাগে। লাইন না দিতে হলে বোধহয় এরকম লাগে। এখন সব ট্রেন বাতানুকুল। এসি। যাব যাদবপুর। এ্যাকাউন্টসের কাজ চলছে। কি সব মিলছে না। তাই একবার না গেলেই নয়।
আচ্ছা গাড়ি চড়ব না। বাতানুকুল ট্রেনে চড়ব। মানুষ দেখব, শশা খাব, আরো যদি ইচ্ছা হয় আমড়া খাব। টাকা খরচা করব না। পয়সা ভালো। মেট্রো স্টপে দেখলাম প্রথম বাঙলা থিয়েটার জনৈক রুশ ভদ্রলোক পত্তন করেছিলেন। গিরীশ ঘোষের ১০০ বছর আগে। তথ্যটা জানার কোনো দরকার ছিলো না। কিন্তু দরকার ছিলো। মগজের স্নায়ু যে এই স্বল্প জানায়, এই সামান্য অবাক হওয়ায় তৃপ্ত হলো, সে দরকারটা ছিলো। আচ্ছা ওই লোকটা আগবাড়িয়ে শশা আমড়া একসাথে মাখতে বলল কেন?
ফুটপাতে অমুক দলের পতাকা প্রোথিত। তার পাশে তমুক নেতার মুর্তি। অজিত কুমার পাঁজার মুর্তি। ফুটপাত দখলের লজিক চলবে না। কারণ লেনিনের মুর্তি সেই ফুটপাতে এখনো আছে। সে ভালো মুর্তি এ বাজে মুর্তি বললে চলবে না। আমাদের ইকুইটিবল হতে হবে। তাই নাকি?
আচ্ছা গাড়ি চড়ব না। বরং ভাবব কেন আশ্বিনের মাত্র একদিন আগে তত গরম নেই। কেন এরকম হাওয়া দিচ্ছে মাঝ দুপুরে। কেন চলে যাবার আগে কিছুটা থেমে থাকি। এসব ভাবব। গাড়িটাড়ি থাক।