দিয়েগো ভেলাজকেজ তরবারির জোরে কিউবার দখল নিলেন ১৫১১ সালে। তারপরের প্রায় ৪০০ বছর (১৮৯৮ সাল অবধি), কিউবা স্পেনের অধীন ছিল।
এই ৪০০ বছরে, কিউবার বুক থেকে আদিবাসীরা সম্পুর্ণ মুছে গেছে। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন। কিছু শব্দ থেকে গেছে। বিদেশীদের সাথে সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে রক্তে থেকে গেছে তাইনো, গুয়ানাহাতাবে, সিবোনে-রা। কিন্তু আমাদের দেশে যেমন নানান ধরণের আদিবাসী সংস্কৃতির উৎসব দেখা যায়, এখানে তেমন কিছু নেই বললেই চলে। প্রায় দুই হাজার বছরের ইতিহাস আজ জাতীয় বিস্মৃতির অতলে নিমজ্জিত।
আদিবাসীরা দ্রুত মুছে গেছিল এস্পানিওলদের অবর্ণনীয় অত্যাচারে। আর উৎকট ইউরোপিও ব্যাধির প্রকোপে (স্মল পক্স)। খনিতে, খামারে শ্রম দেওয়ার জন্য কিউবায় আসতে শুরু করল আফ্রিকার দাসরা।
১৫২২ সালে প্রথম। তারপর থেকে স্রোতের মত।
এস্পানিওলদের সাথে উত্তর আমেরিকার দাসমালিকদের একটা পার্থক্য ছিল। প্রথমত কিউবায়, মালিকরা দাসদের তাদের নিজস্ব গোষ্টীর মধ্যে রাখতেন। সুদূর আফ্রিকায় তারা যে গোষ্ঠীতে থাকত, কিউবায় এসে দাসরা সেই একই গোষ্ঠীর মানুষদের পেয়ে যেত। অতএব তাদের নিজস্ব গান বাজনা, সংস্কৃতি বেশ কতকটা টিঁকে যেতে পেরেছে। এমনটা কিন্তু উত্তর আমেরিকায় হতে পারেনি। হাভানার তীরে অঙ্গনা এক যুগলের সাথে যখন গলা মেলাচ্ছিল, তাদের একজনের হাতে ছিল এক প্রাচীন আফ্রিকান বাদ্যযন্ত্রঃ
দ্বিতীয়ত, দাসপ্রথার সবরকম জুলুম থাকলেও, কিউবায় দাসদের কিছু সুযোগ সুবিধাও ছিল। তারা আইনত বিয়ে করতে পারত, সম্পত্তি কিনতে পারত, এমনি নিজের স্বাধীনতা কিনে নিতেও পারত। দীর্ঘ চারশ বছরে অনেক দাসই তাদের সহস্র প্রতিকুলতা অতিক্রম করে স্বাধীন হতে পেরেছে। সঙ্গে রেখে গেছে তাদের নিজস্ব ধরানার সংস্কৃতির ছাপ।
এই ভাবে কিউবার বুকে এস্পানিওল সংস্কৃতির সাথে আফ্রিকান সংস্কৃতির এক বিচিত্র মিলন ঘটে গেল।
দাস শ্রমের কাঁধে ভর করে কিউবায় এস্পানিওল প্রভুরা অসংখ্য টাকা রোজগার করতে শুরু করলেন। পশু পালন, তামাক ক্ষেত তো বটেই, ততদিনে কিউবায় মাথা তুলতে শুরু করেছে অসংখ্য চিনির কল। এই ‘চিনি’র কাঁধে ভর করে একদিন কিউবা হয়ে দাঁড়াবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক বন্ধু! এই ‘চিনির কল’ আজও কিউবার অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ।
হাভানা থেকে ত্রিনিদাদ যাওয়ার পথে চোখে পড়বে মাইলের পর মাইলে আখের ক্ষেত। হয়ত তারই মধ্যে ফুটে উঠবে দীর্ঘকায় কৃষ্ণবর্ণ পুরুষ মহিলাদের দেহ। যাদের শ্রমে আজকের কিউবার বড় বড় মিনার তৈরী হতে পেরেছে।