ধারে ধারে ধাঁই

(১) ধার নেওয়া ভালো না খারাপ? প্রশ্নটা ভারি শক্ত।

আর পাঁচটা ব্যাপারের মতই, হাত উলটে, ন্যাকামি করে বলতে হবে ‘it depends!’।

পশ্চিম বাংলার ধার কত?

৩৬৬ টাকা (লক্ষ কোটি আর লিখছি না)।

বামফ্রন্ট গত হওয়ার সময় কত ছিল?

১৯৩ টাকা।

তাইলে? কেস তো ক্রমশঃ খারাপের দিকে যাচ্ছে?

এই খানেই উত্তরটা খানিক জটিল হয়ে যাবে। বামফ্রন্ট যখন অস্তাচলে গেলেন (২০১০) তখন উৎপাদন কম ছিল যে! আয় ছিল আরও কম।

___________________

২০১০-১১

উৎপাদনঃ ৪৬১ টাকা
বাজেটঃ ৬৭ টাকা (উৎপাদনের ১৪% একটু বেশি )
ধারঃ ১৯৩ (উৎপাদনের ৪১%, আয়ের তিনগুণ! )

২০১৭-১৮

উৎপাদনঃ ১০৪৮ টাকা
বাজেটঃ ১৮৫ টাকা (উৎপাদনের ১৭.৫%)
ধারঃ ৩৬৬ টাকা (উৎপাদনের ৩৫%, আয়ের দুইগুণ)

____________________

তাহলে যত উৎপাদন হয়েছে তার তুলনায় ধার-এর পরিমাণ কমেছে।

সরকারের বাজেটও অনেকটা বেড়েছে। টাকার মূল্যে বেড়েছে কিনা সে প্রশ্নে যাচ্ছি না। (মুদ্রাস্ফীতির প্রসঙ্গ উঠবে)। কিন্তু ধারের অনুপাতে বেড়েছে তাতে সন্দেহ নাস্তি।

যেখানে ২০১০ সালে বাজেটের তিনগুণ ছিল ধার, সেখানে ২০১৭ তে কমে দাঁড়িয়েছে দুইগুণে।

আপনি বলবেন, উৎপাদনের ৩৫% ভাগ ধার থাকাটাও বেশ বাজে। কথাটা ঠিক না ভুল সে বিচারে যাচ্ছি না। কিন্তু মাথায় রাখার মত তথ্য হচ্ছেঃ ক্যালিফোর্নিয়ার ধারের পরিমাণ তার উৎপাদনের ৫৪%!

আপনার মাসে যদি ২৫০০০ টাকা আয় হয়, আর একটা অল্টো গাড়ি কিনে ফেলেন, তবে আপনার ব্যক্তিগত ধার দাঁড়াবে আপনার বার্ষিক উৎপাদনের ১০০%।

 

(২) ধার কত সে নিয়ে ভেবে লাভ নেই। EMI কত এই হল প্রশ্ন।

বছরে রোজগার যদি হয় ১০০ টাকা:

২০১০-১১ সালে, সুদ-আসল মিলিয়ে EMI ছিল বছরে ৪১ টাকা। বাকি ৫৯ টাকায় ঘর চলত।

২০১৭-১৮ সালে, সুদ আসল মিলিয়ে ই-এম-আই দাঁড়িয়েছে বছরে ২৮ টাকায়! এখন ঘর চালাতে থাকে বাকি ৭২ টাকা।

EMI এর চাপটা কমে এসেছে।

আমার কথা বলছি না। পশ্চিমবাংলার কথা হচ্ছিল। (EMI কথাটা আবার আক্ষরিক অর্থে নেবেন না)

_______________________

২০১০ সালে ৬৭ হাজার কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে ২৬ হাজার কোটি ধার শুধতে খরচা হত।

২০১৭ তে ১৮৫ হাজার কোটির বাজেট। ধার শোধ করতে খরচা হয় বছরে ৪৭ হাজার কোটি টাকা।

_______________________

তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আয় বাড়িয়েছেন, ইএমআই কমিয়েছেন।

কাজটা কি ভালো হয়েছে?

বলা শক্ত।

বেশি বেশি ধার নিয়ে, পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে খরচ করলে, ভবিষ্যৎ-এ উন্নতির সম্ভাবনা। ধার কম নিলে এসব খাতে খরচও কমে যায়।

আপনি বলবেন সরকার ক্লাব, দূর্গাপুজো, মেলা, ইমাম, মোয়াজ্জেম করে টাকা নষ্ট করছে। কথাটা নিতান্ত মিথ্যা নয়। কিন্তু সত্যি কি?

মনে করুন আপনি বছরে ১,৮৫,০০০ টাকা রোজগার করেন। আপনি যদি ২৮ টাকা দিয়ে একটা চিকেন রোল খান, তা নিয়ে কতটা হা হুতাশ করা যুক্তিযুক্ত?

(পশ্চিমবাংলার বাজেট ১৮৫০০০ কোটি। দূর্গাপুজো কমিটিকে দেওয়া হয়েছে ২৮ কোটি)।

মাথায় রাখতে হবে দূর্গাপুজোর সঙ্গে একটা বিরাট সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে আছে। এবং এরা কেউই টাটা আম্বানি নন। ছোট ব্যাবসায়ী, শিল্পী, পোটো, জামা কাপড়ের দোকানদার।

আপনি বলতে পারেন কাজটা নৈতিক ভাবে ঠিক না। সে নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে এ খরচটাকে খুব ভয়ানক কিছু মনে করার কোনো কারণ নেই।

২৮টাকার রোল তো আপনি আমি হামেশা খাচ্ছি।

২০১০ সাল এর পর থেকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আয় বাড়িয়েছেন, ই-এম-আই কমিয়েছেন এবং এ সমস্তই হয়েছে উৎপাদনের হার এক রেখে (বা আরো বেশি রেখে)। অর্থনীতির বিচারে এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.