এবার কিন্তু রেকর্ড স্থাপন করে ফেলেছি। নয় মাস টানা দেশছাড়া। আগের বার গুলোয় টানা এতদিন বাইরে থাকিনি।
বন্ধুরা বলেছিল,’ভাই এবার কিন্তু কমপ্লিট করে আসিস।’ পড়শি বুঝিয়েছিল,’দরকার কি তোর গিয়ে। সেই তো চলে আসবি। তারচে এখানেই কিছু একটা…।’ কিন্তু কপালের নাম গোপাল। নইলে যে নিতান্ত কলকাতাতেই মাখামাখি হয়ে থাকতে চায়, তাকে বিদেশ বিভুঁয়ে টানাটানি কেন?
সে যাই হোক, শত্তুরের মুখে ছাই আমি গত অগাস্ট থেকে মার্কিণ দেশে থানা গেড়ে বসে আছি। এক্কেবারে নট নড়ন চড়ন। সমস্ত ফেংশুইকে ব্যার্থ করে দিয়ে গাড়ি কিনি নি সাত মাস। ফ্ল্যাট থেকে ইউনিভার্সিটি আর ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্ল্যাট করে কাটিয়ে দিচ্ছি। এক্কেবারে ভালো ছেলের মত টপোলজি পড়ছি আর আলু সেদ্ধ খাচ্ছি দিনের পর দিন।
এহেন ‘ভাল ছেলে’ আমি যখন গ্রীষ্মকালে কলকাতা ফেরার প্ল্যান করি, তখন সহজেই অনুমেয় যে কি কি ঘটতে পারে!
প্ল্যান প্রোগ্রাম সেই জানুয়ারি থেকেই চলছে। আড়াই মাস কলকাতাবাসে কি কি করতে হবে তার লিস্টি। এর মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের উত্তর পূর্ব ভারতের রোড ট্রিপ আছে, একাডেমি থেকে গিরীশ মঞ্চ অবধি নাটক, কবিতা, নাচের অনুষ্ঠান আছে, একটু বিপজ্জনক মাত্রায় প্রেম ও ঝগড়া আছে, পুরোনো কলেজের বন্ধুদের রিইউনিয়ান আছে, কফিহাউস থেকে ফেভারিট কেবিন অবধি এলোপাথারি আড্ডা আছে, চুর্ণি নদীর তীর থেকে ময়ুরাক্ষীর চর অবধি, নন্দনের লাল চা থেকে যাদবপুরের ওয়ার্ল্ডভিউ অবধি, সব ঠাসাঠাসি ঘষা ঘষি হয়ে আছে।
কিন্তু, কিন্তু, কিন্তু,
কবি জানেন এ সবই গৌণ।
সব্বার থেকে বেশি গুরুত্ত্বপূর্ণ হল ভোজসূয় যজ্ঞের ফন্দি। বাইরে যে বা যারা ডক্টরেট (অথবা অন্য কিছু) করতে এসেছে, তারা এক বাক্যে হলফনামায় সই দেবেঃ খাওয়া দাওয়া নিয়ে বড্ড চাপ।
যে বা যাহারা রান্না করতে জানেন না, তাদের তো শিরে সংক্রান্তি। নিতান্ত আলু সেদ্ধ খেয়ে আর মাংস সেদ্ধ খেয়ে এসব অভাগাদের দিন কাটে। সেই সব মানুষেরা যখন কলকাতা ফেরেন, তাদের পয়লা প্রায়রিটি, দিল্লী দখলের চেয়েও বড় প্রায়রিটি হয় ‘খাওয়া’।
কিসব ফন্দি এঁটেছি খাওয়া দাওয়া নিয়ে তারই একটা ফিরিস্তি দেওয়া যাক। কিছু বাদ গেলে দয়া করে কমেন্ট করে জানাবেন। বড়ই বাধিত থাকিব।
প্রথমে একটু মাছ হয়ে যাক
একটু সকাল সকাল বেড়িও। মাছটা টাটকা পাবে। চিতল মাছের মুইঠ্যার জন্য অবশ্যি করে মানিকতলার ওসমানচাচার মাছ নিতে হবে। এ ক্লাস জিনিষ। চিতলের পিঠ চেঁছে নরম মাছ তুলে আনে চাচা, এক লহমায়।
অন্যদিকে কই মাছ তো দিব্য লাফাচ্ছে। জ্যান্ত তরতরে। কিনে নাও সেরটাক। পমফ্রেটও বেশ ভালো উঠেছে আজ। রুই অথবা কাতলা কিন্তু শেয়ালদা বাজার থেকে কিনলেই ভালো। কানকো দেখে কিনো । অনেক সময় রঙ দিয়ে কানকোটা লাল করে দেওয়া হয়। তাই একটু পরখ করে তবে কিনো বাপু।
মৌরলা মাছ অথবা কাজলি মাছের কথা বেশি না বলাই ভালো। তবে ডালের সাথে নিতান্ত যদি খেতেই চাও তবে গয়নাবড়ি কিনে আনো দক্ষিনাপণ থেকে। সঙ্গে একটু আমের আচার। ভরা গ্রীষ্মে আমের তো অভাব নেই।
ভেটকি মাছ নিয়ে কিন্তু এদিক ও দিক করাটা ঠিক হবে না। মানিকতলার চার নম্বর রোতে একদম টাটকা ভেটকি ফিলে করে দেবে। পাতুরির জন্য একদম সেরা। সর্ষে নিয়ে নিও বেশ কিছুটা। আর সাথে কাসুন্দি। দয়া করে বিগ বাজার বা স্পেন্সার জাতীয় মলে মুত্রে যেও না। ভগবানের কৃপায় এখনো খাঁটি জিনিষটা শেয়ালদা বাজারে পাওয়া যায়। অতএব ওই অশিক্ষিতপনাটা নাই বা করলে।
চিংড়ির আর ইলিশ তুমি মানিকতলা থেকে কিনো না। এটা একটু বিশেষ ব্যাপার। একদম ভোর ভোর রুপনারায়ণ বা ডায়মন্ড হারবার চলে যেতে পারো। রুপোলি ইলিশ পাবে। একদম জেলেদের থেকে। গোল মুখ দেখে কিনো। ডায়মন্ডের ইলিশে তেল একটু বেশি থাকে। রুপনারায়ণে কম। দেড় কেজির কম কিছু কিনো না। স্বাদ উঠবে না। ডায়মন্ড হারবার যদি একান্ত যাও তাহলে দেবুর হোটেলে ঢুঁ মারতে ভুলো না। আহা সে সব সর্ষে ইলিশ তো তোমরা চোখেই দেখোনি।
চিংড়ি আনতে তোমায় একটু কাঠ খড় পোড়াতে হবে। সাইন্স সিটির পাশ দিয়ে ভোর ভোর চলে যাও বাসন্তি হাইওয়ে ধরে মালঞ্চর দিকে। বাগদা, গলদা, দিশি, কত চাই। মালাইকারিটারি তো হবেই। একটু কচি দেখে লাউ নিও। লাউচিংড়ির কিন্তু জবাব নেই।
ক্রমশঃ
জানি না তোর প্ল্যান আছে কি না, কিন্তু নিজ়ামের বিফ বিরিয়ানি!!! আর্সালানের মত হয় তো সুখী নয় কিন্তু politically correct তো অন্তত নয়! 🙂
LikeLike
Yes!!! Biriyani porbo ashiteche… Kon nizam by the way?
LikeLike
Amader shumohaan Esplanade’er Nizam. Hogg Shaheber market’er pashe.
LikeLike
Ok… List e jog holo 🙂
LikeLiked by 1 person
khub beshi chital, bhetki, chingri kheye jakhan May maser garame asthir hoye uthbe takhan kalojire diye desi pabdar jhol r garam bhater nemontonno roilo amader kachhe.
LikeLike
এই তো আমার লেখনির ফল ফলতে শুরু করেছে … ঃ)
LikeLike