আমার গ্রাম

ভোর চারটের সময় সন্ধি পুজো। কান খাড়া করে আমি শুয়ে। পাশেই মা ঘুমে অচৈতন্য। ঠিক সাড়ে তিনটের সময় ডাক, ‘অনি, উঠেছিস?’ সন্ধি পুজার পদ্মফুল বাছা হবে। একশো আট পদ্ম। মেয়েটা তাই আমায় ডাকতে এসেছে। একা একা অতগুলো ফুল কি বাছা যায়?

ব্যালকনির সামনে দিয়ে ট্রাই সাইকেল করে ছেলেটি দিব্যি যায় আসে। আমার হাতের চামড়া সাদা সাদা গ্রীলের গায়ে চেপে বসেছে। নাকটা বাড়িয়ে দিয়ে দেখছি পঙ্খিরাজকে। ‘তোমার নাম কি?’ ছেলেটি আমায় প্রশ্ন করেছিল। উত্তর দিইনি। ভেতরে চলে এসেছিলাম।

দুই দেয়ালে দুই পত্রিকা। আমার হাতের লেখা খারাপ? বলেটা কি?! এবার বাছাধনরা টেরটি পাবে। দোতলায় দৌড়। ‘এই একটা কবিতা দিস।’ সাইকেলের রেসে বরাবর তার কাছে হেরে এসেছি। সে দিল একটা ইংরেজী পদ্য। তিনতলায় হাঁক। ‘আছিইইইইস?’ ‘হ্যাঁ রে বাবা। যাবটা কোথায়?’ বেশ তাহলে একটা কমিকসই দিস। সে দিল কালো রঙে আঁকা কমিক্স।

বিকালে দাদারা ক্রিকেট খেলতে নামত। তারপর পিট্টু আর লুকাচুরি। অবলীলায় নর্দমার থেকে বল কুড়াতাম। হাইজিন? সে আবার কি? আর তার পর ছোঁওয়া ছুঁয়ি নাকি খো খো খেলার সময়, মেয়েটা গম্ভির মুখে বলত, ‘এই তোর সাথে খেলব না।’ খণ্ডযুদ্ধ বেধে যেত। আমাদের গ্রামে।

আমাদের গ্রাম ইঁট কাঠ কংক্রিটে ভরতি। তবু ভোর হলে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র-র ডাক শুনে সবাই জেগে উঠি। মা এলে আমাদের গাঁয়ের পুজা প্রাঙ্গনে হাজার লোকের পাত পড়ে। জনে জনে বার বার জিজ্ঞেস করি, ‘খিচুড়ি টা আরেকটু দিই।’, ‘আহারে, কেমন রোগা হয়ে গেছে মেয়েটা, দে আর দুটো রসগোল্লা দে ওর পাতে।’ নাটকের মহড়ায় আমরা রাতের পর রাত জাগি। অথবা ইলিশ কিনতে বেড়িয়ে পড়ি মধ্য রাতে। যাবার সময় গাঁয়ের সীমানায় থমকাই। ‘কি রে যাবি নাকি?’ ‘এখন?’ ‘রুপনারায়ণের তীরে যাচ্ছি। যাবি নাকি? ফিরতে ভোর হবে।’ সে বিনা বাক্যব্যয়ে আমার পঙ্খিরাজে সওয়ার হয়। যেন এমনটা হয়েই থাকে।

বহু সহস্র ক্রোশ দুরে যারে আছে, তাদের মনও হয়ত আমার এই শীতলপাটি গ্রামের মাঠেই বেঁচে থাকে। চাকরি করতে, পড়াশোনা করতে, বিয়ের সূত্রে অথবা পথ ভুল করে তারা শরীর নিয়ে চলে গেছে এ দেশে সে দেশে এ কালে সে কালে।

এখন আমিও কিছুদিনের জন্য প্রবাসী। তবু মহাকায় শহরের বুকে যখন বৃষ্টি আসে, আমার ঘরের কথাই মনে হয়। আমাদের ভেতর ঘরের জানলা দিয়ে কেমন আকাশ দেখা যেত। মেঘ করে কালো হয়ে আসত সমস্ত পৃথিবী। ছুট দিতাম ছাদে। অথবা চুপটি করে দাঁড়াতাম ব্যালকনি তে। দিদু সেখাত, ‘এই দেখ, এভাবে ভাঁজ করে ময়ূরপঙ্খী হয়।’ ভাসিয়ে দিতাম নাও। কাগজের নাও কেমন বৃষ্টিজলে মাথা নুইয়ে চলত টুক টুক করে। আর হৃদয় যেন আকাশ হয়ে উঠত আনন্দধারায়।

8 Comments

  1. shankharupa bose says:

    meyti aami…..i think.

    Like

  2. shankharupa bose says:

    i am sure

    Liked by 1 person

  3. Reeshita Chatterjee says:

    loved it….. tobe shankarupa kobe phul bachlo !!!!

    Like

    1. সঙ্খরুপা তো খেলা থেকে বাদ দিয়েছিল। ফুল বাছবে ও?! চারটের সময়?! ঘুম ভাঙবে? ফুল বাছলো তো আরেকজন ঃ)

      Like

  4. Sucheta says:

    Hather lekha kharap ta ami

    Like

  5. Shalmali Bandyopadhyay says:

    eta lekha noe..jno chhobi…

    Like

  6. jotihinchorus says:

    🙂

    Like

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.